Walton
ads
D Diamond

বকশীগঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে হামলায় ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

এম এ ছালাম মাহমুদ, বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি

বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, বিকাল ৫:২৯

received_787798793260501 (1).jpeg

জামালপুরের বকশীগঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে হামলার ঘটনায় নামীয় ৭ জনসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সাব-রেজিষ্ট্রার আব্দুর রহমান মোহাম্মদ তামিম। ২৮ মার্চ তিনি থানায় ওই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল আহাদ খান।

একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দলিল লেখকদের একাংশ সাব-রেজিষ্ট্রার তামিম মোহাম্মদের অপসারণ দাবি ও কর্মবিরতী পালন করছেন। 

 

জানা যায়, বকশীগঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে ২৭ মার্চ বুধবার দাতা রেহেনা বেগম নামে জনৈক ব্যাক্তি ৫৮ শতাংশ জমি  তার ছোট বোন রুবিনা আক্তারের কাছে বিক্রি করেন। বিক্রিত জমি দলিল করার জন্য দলিল লেখক শহীদুল্লাহর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেরি করতে যান। দলিল লেখক শহীদুল্লাহ সাব-কবলা দলিল না করে সরকারের রাজস্ব ফাকিঁ দিয়ে হেফা দলিল হিসেবে দলিল সম্পাদনা করার জন্য সাব-রেজিষ্ট্রার আব্দুর রহমান মোহাম্মদ তামিমের এজলাসে দাখিল করেন।

পরে দলিল যাছাই বাছাই করে সাব-রেজিষ্ট্রার আব্দুর রহমান মোহাম্মদ তামিম জমির দাতা রেহেনা বেগমকে জিজ্ঞাসা করেন জমির টাকা বুঝিয়া পাইয়াছেন কি না। দাতা রেহেনা বেগম এজলাসে সবার সামনে সাব-রেজিষ্ট্রারকে জানান বিক্রিত জমির সাকুল্য টাকা বুঝিয়া পেয়েছি । পরে সাব-রেজিষ্ট্রার আব্দুর রহমান মোহাম্মদ তামিম জমির দাতা রেহেনা বেগমকে বলেন টাকা বিনিময়ে জমি হস্তান্তর হলে দানপত্র বা হেবা দলিল হয়না। তা সাব- কবলা দলিল করতে হয়। তাই সাব-রেজিষ্ট্রার আব্দুর রহমান মোহাম্মদ তামিম দলিলটি সংশোধন করে উক্ত দলিল লেখককে সাব-কবলা দলিল করার নির্দেশনা দেন। 

পরবর্তীতে দলিল লেখক পরিবর্তন করে দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মোহাম্মদ আলী হাসান একই দলিল সাব-কবলার পরিবর্তে দানপত্র বা হেবা দলিল সম্পাদনা করার জন্য পুনরায় এজলাসে দাখিল করেন। সাব-রেজিষ্ট্রার আব্দুর রহমান মোহাম্মদ তামিম দলিল সম্পাদনার পূর্বে আবারও জমির দাতা রেহেনা বেগমকে জিজ্ঞাসা করেন জমির টাকা বুঝিয়া পাইয়াছেন কি না। জমির দাতা আবারও এজলাসে সবার সামনে বলেন বিক্রিত জমির টাকা বুঝিয়া পেয়েছি বলে স্বাক্ষ দেন।

 তখন সাব-রেজিষ্ট্রার আব্দুর রহমান মোহাম্মদ তামিম দলিল সম্পাদনা না দলিল লেখক খন্দকার মোহাম্মদ  আলী হাসানকে দলিলটি ফেরত দেন। এতে করে দলিল লেখক সমিতির নেতা  অশ্লীল বাকবিতন্ডের একপর্যায়ে  ও সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে হামলা চালায় । হামলায় এজলাসে থাকা জমির দলিল, জমির দলিলের অবিকল নকল, ৫২ ধারার রশিদ বইসহ অন্যান্য দাপ্তরিক কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে।

 হামলাকারী সাব-রেষ্ট্রিারের খাস কামরার দরজায় লাথি মেরে ভাঙ্গার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে খাস কামরায় সাব-রেজিষ্ট্রার আব্দুর রহমান মোহাম্মদ তামিম অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ঘটনার খবর পেয়ে বকশীগঞ্জ থানার পুলিশ সাব-রেজিষ্ট্রারকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার ও হামলায় ক্ষয়ক্ষতির আলামত পরির্দশন করেন। 

এব্যাপারে দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মোহাম্মদ আলী হাসান জানান, প্রতিনিয়ত সাব-রেজিষ্ট্রার আব্দুর রহমান মোহাম্মদ তামিম দলিল লেখক ও সেবাদানকারীদের অন্যায়ভাবে হয়রানি করে আসছে। তাই সমস্ত দলিল লেখক তার অপসারণের দাবি করে আসছেন। তার অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত দলিল লেখকদের কর্মবিরতী চলমান থাকবে। 

দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ফিরোজ মিয়া জানান, দলিল লেখকদের এক দফা দাবি সাব-রেজিষ্ট্রারের অপসারণ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দলিল লেখকরা কর্মবিরতী চালিয়ে যাবে।

 

এব্যাপারে সাব-রেজিষ্ট্রার আব্দুর রহমান মোহাম্মদ তামিম জানান, আমি সরকারের রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ২৮ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্বে আছি। এর মধ্যে তিন মাস প্রশিক্ষণে ছিলাম। প্রশিক্ষন সময় বাদ দিলে মাত্র ২০/২৫ কর্ম দিবসে বকশীগঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে দলিল সম্পাদনা করেছি। প্রতিটি কর্ম দিবসে সরকারের নীতিমালানুযায়ি আমি কাজ করেছি। উক্ত দানপত্র বা হেবা দলিল রেজিষ্ট্রেরি করলে সরকার রাজস্ব পাবে মাত্র ২ হাজার ১২ টাকা। কিন্তু সাব- কবলা দলিল করলে সরকার রাজস্ব পাবে ৪ লক্ষাধিক টাকা। তাই দাখিলকৃত দলিলটি রেজিষ্ট্রেরি না করায় তারা আমার অফিসে হামলা করেছে এবং আমাকে অবরুদ্ধ করে রেখে ছিলো। পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করেছেন। 

এব্যাপারে বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল আহাদ খান জানান, ঘটনার বিষয়ে সাব-রেজিষ্ট্রার আব্দুর রহমান মোহাম্মদ তামিম লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে আলী হাসান খন্দকার, তার ছেলে লিটু মিয়া, ভাগিনা মোফাজ্জল হোসেন মিষ্টারসহ নামীয় ৭জনকে আসামী করেছেন। অজ্ঞাত নামা আসামী ১০/১৫ জন। অভিযোগের বিষয়ে আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।