Walton
ads
D Diamond

শ্রেণিকক্ষ সংকটে ব্যাহত হচ্ছে কুবির শিক্ষা কার্যক্রম

কুবি থেকে মো. তোফাজ্জল হোসেন

সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, দুপুর ১:২৫

image1.png

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকটে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। একাধিক বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একই রুম শেয়ার করে পাঠদান করছেন। অথচ প্রত্যেক বিভাগে পাঁচটি ব্যাচ চলমান থাকলেও সেই তুলনায় শ্রেণিকক্ষ রয়েছে দু-তিনটি। তুলনামূলক  নেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ। তাছাড়া ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের ভর্তির পর এ সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করেন তারা।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ টি অনুষদ, ১৯ টি বিভাগ থাকলেও সে তুলনায় নেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ। প্রত্যেকটি বিভাগে কমপক্ষে ১০টি করে সেমিস্টার থাকলেও শ্রেণিকক্ষ রয়েছে অতিঅল্প। ফলে এক সেমিস্টারের ক্লাস শেষ হতে না হতেই অন্য সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা ঐ ক্লাসরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন। এতে ক্লাস রুমে অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনসংযোগে যেমন ব্যাঘাত ঘটে, তেমনি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীরাও অস্বস্তি বোধ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদ ভবনে রয়েছে বাংলা ও ইংরেজি ২টি বিভাগ এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ রয়েছে অর্থনীতি, লোক প্রসাশন, নৃ-বিজ্ঞান, প্রত্নতত্বসহ মোট ৪টি বিভাগ। এই ৬ টি বিভাগেই রয়েছে তীব্র শ্রেণিকক্ষ সংকট।

অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদে রয়েছে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, পরিসংখ্যান ও ফার্মেসী ৫টি বিভাগ। এই ৫টি বিভাগের প্রাকটিক্যাল ক্লাসের সময় তীব্র সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানান শিক্ষার্থীরা। এক ব্যাচের প্র্যাকটিকাল থাকলে আরেক ব্যাচ ক্লাস করতে অসুবিধা হয়। অনেক সময় ক্লাস শিডিউল থাকলেও বাতিল করতে হয় ক্লাস।

এদিকে অর্থনীতি বিভাগের এস কে মাসুমসহ একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, বিভাগের পাঁচটি ব্যাচের ক্লাস করার জন্য ক্লাসরুম মাত্র তিনটি। এই একটি ক্লাসরুমে তাদের পাঁচটি ব্যাচের ক্লাস কিংবা পরীক্ষা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে। নিয়মিত ক্লাস এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বিঘ্ন ঘটছে। এছাড়া অর্থনীতি বিভাগের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র দুটি টয়লেট বরাদ্দ রয়েছে। পাশাপাশি ল্যাব না থাকায় ল্যাব ক্লাসের সুফল পাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের শ্রেণিকক্ষ সংকটের পাশাপাশি নিচ তলার কক্ষে পানি প্রবেশ করাসহ আর্বজনায় পরিপূর্ণ। খসে পড়ছে দেয়ালের আস্তর। জরুরি প্রয়োজনে শ্রেণিকক্ষ ধার করে ক্লাস করতে হয় আমাদের।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাজিব বলেন, আমাদের প্রতিটি ব্যাচের জন্য মাত্র ৩টি ক্লাসরুম বরাদ্দ রয়েছে। ফলে কোন কারণে রুটিন অনুযায়ী কোন একটি ক্লাস মিস হলে, পরবর্তীতে সেই ক্লাস মেকআপ করার কোন সুযোগ থাকে না। অনেক দীর্ঘ সময় কোরিডর কিংবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে করে দিন দিন ক্লাস না করার ইচ্ছে জাগে।এমনকি ক্লাসরুমগুলোতে ফ্যান ও লাইটিং এর সমস্যা প্রবল। ক্লাসরুম সময় দেখার মতো কোন ঘড়ির ও ব্যবস্থা নেই।

শ্রেণি সংকট নিয়ে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ সামাজিক অনুষদ থেকে স্থানান্তরিত হওয়ায় সেই বিভাগের ব্যবহারিত কক্ষগুলো এখন ফাঁকা রয়েছে। যদি সেই কক্ষগুলো সামাজিক ও কলা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে বণ্টন করে দেয়া যেত, তাহলে  তাৎক্ষণিকভাবে শ্রেণিকক্ষ সংকট কিছুটা নিরাময় করা যেত। কিন্তু এবিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের তেমন কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ন কবির দেশের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। যখন কাজ সম্পন্ন হবে তখন শ্রেণিকক্ষ সংকট আর থাকবে না। এখন শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসন করা সম্ভব না। তাছাড়া শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণেই বেশ পুরনো এই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ১৯টি বিভাগ দিয়েই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। ফলে নতুন করে বিভাগ চালু করাও সম্ভব হচ্ছে না। অথচ অন্যান্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয়র এর থেকে বেশি বিভাগ দিয়ে পাঠদান করে আসছে। আশা করি, আগামী ২ বছর পরে নতুন একাডেমিক ভবন চালু হলে শ্রেণিকক্ষ সংকটসহ অন্যান্য যেকোন ধরনের সমস্যা থাকবে না।