Walton
ads
D Diamond

ধামরাইয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথোৎসব শুরু ১ জুলাই থেকে

ধামরাই (ঢাকা) মোঃ নূরহোসেন

বুধবার, ২৯ জুন ২০২২, রাত ৮:১৭

received_1231497637602140 (1).jpeg

ঢাকার ধামরাইয়ে আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাচ্ছে পৃথিবীর দ্বিতীয় ও এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ রথ উৎসব।

ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে ৩৫১তম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এর কার্যক্রম শুরু হবে। রথমেলা চলবে মাসব্যাপী। করোনা মহামারির কারণে ২০২০-২০২১ দুই বছর এ রথোৎসব অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই এবছর ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ রথোৎসব।

মূলত সনাতন হিন্দু ধর্মীয় ভাবধারা ও অনুভূতির ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেও জাতি ধর্ম, বর্ণ শ্রেণী পেশা, ধনী, গরীব নির্বিশেষে এ রথমেলা সকল মানুষের মহামিলন মেলায় পরিণত হয় প্রতি বছরই। রথের রশি ধরে টানছেন, আনন্দ বিনিময় করেছেন, এই সাম্যই রথযাত্রার মূল শিক্ষা।

ধামরাইয়ের শ্রীশ্রী যশোমাধব দেবের রথযাত্রার ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলা ১০৭৯ সালে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১২০৪ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ১২৫ বছর পর্যন্ত রথযাত্রা চলে এসেছে। তারপর বালিয়াটি জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় রথযাত্রা অব্যাহত থেকেছে আরও ১৪৬ বছর। বাংলা ১৩৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলোপের পর মির্জাপুরের দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা এগিয়ে আসেন রথযাত্রার উৎসব আয়োজন যা আজও অব্যাহত আছে। তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরী শ্রী রাজীব প্রসাদ সাহা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তি এবং শ্রীশ্রী যশোমাধব মন্দির কমিটির সহযোগিতায় শ্রীশ্রী যশোমাধব দেবের সেবা ও রথ পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

শুক্রবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হচ্ছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো উপমহাদেশ খ্যাত ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী যশোমাধব দেবের রথযাত্রা ও মাসব্যাপী রথমেলা। এ দেশের সনাতনধর্মী হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় রথ উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার ধামরাইয়ে। ৯ই জুলাই অনুষ্ঠিত হবে উল্টো রথ যাত্রা উৎসব বা পুর্নযাত্রা অনুষ্ঠান। তবে রথমেলা চলবে পুরো মাসব্যাপী। রথমেলা উপলক্ষে সার্কাস দল, নাগরদোলা, নাচ, গান, এবং হরেক রকম সৌখিন জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মেলায় বাঁশের বাঁশি, ছোট বড় কাঠের ঘোড়া, পুতুল, হস্ত শিল্প ও ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী তামা-কাঁসা শিল্পের তৈজসপত্রের স্টলও বসেছে।

এরথ উৎসব হিন্দু ধর্মীয় ভাবধারায় প্রায় ৪ শত বৎসর পূর্ব হতে শুরু হলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কারনে এই উৎসব ব্যাপক ভাবে সার্বজনীনতা লাভ করেছে। এই ধর্মীয় রথ উৎসবকে কেন্দ্র করে ও ইতিহাস খ্যাত ধামরাইয়ে বেড়ানোর জন্য প্রতিটি বাসগৃহে দূরদূরান্ত থেকে আত্মীয় স্বজন এসে ভীড় করে। অতীতে বাংলাদেশ নয় বিদেশ থেকেও হাজারও ভক্তবৃন্দরা রথ উৎসবকে কেন্দ্র করে ধামরাইয়ে এসে সমাগত হতো। এখনও পূর্বের ন্যায় আসে ভক্তবৃন্দরা। পুরো উৎসবটিই কালের বিবর্তনে এখন ধর্মীয় ভাবধারা নয় সার্বজনীন মিলনমেলা বা স্রোতধারায় প্রভাবিত হচ্ছে। এই ঐতিহ্যবাহী রথ উৎসবকে কেন্দ্র করে গোটা ধামরাইয়ে এখন সাজ সাজ রব পড়ে গেছে, মেলায় শত শত ষ্টল বসেছে। শ্রী শ্রী যশোমাধব মন্দির ও রথোৎসব পরিচালনা কমিটি কর্তৃক রথের যাবতীয় ও সাজ সজ্জার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এবারও রথ উৎসব ও মেলার উদ্বোধনী অনষ্ঠানে মন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ ও যশোমাধব মন্দির পরিচালনা ও রথ কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল জীবন কানাই দাস (অবঃ), শ্রীশ্রী যশোমাধব মন্দির পরিচালনা ও রথ কমিটির সাধারন সম্পাদক কুমুদিনি ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান ও প্রয়াত বিশিষ্ট দানবীর আরপি সাহার পৌত্র (নাতিরাজিব প্রসাদ সাহা) প্রমূখ উপস্থিত থাকবেন। ধামরাই যাত্রাবাড়ী শ্রীশ্রী যশোমাধব মন্দিরের মেলাঙ্গনের মাধব মন্দির মাঠ, কায়েতপাড়াস্থ শ্রীশ্রী যশোমাধব মন্দির ও ঐতিহাসিক শ্রীশ্রী যশোমাধব দেবের রথ মন্দির কমিটির উদ্যোগে সংস্কার করা হচ্ছে বলে জানান কমিটির সহ-সভাপতি প্রভাষক ডাঃ অজিত কুমার বসাক। রথ উৎসব উপলক্ষ্যে কায়েতপাড়াস্থ রথ খোলায় ও রথের সামনে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে। এ সময় ডাক ঢোল কাঁসর ঘন্টা ও মহিলাদের উলু ধ্বনিতে মাধব মন্দিরের বর্তমান প্রধান পুরোহিত উত্তম কুমার গাঙ্গুলী ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করবেন। দুপুরে মাধব মন্দিরে ভোগ রাগের পর প্রসাদ বিতরণ করা হবে আগত হাজারো ভক্ত বৃন্দের মাঝে।

বিকেলে রথের সামনে লাখো ভক্তের উপস্থিতিতে উদ্বোধনী আলোচনা সভা শেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রথটানা হবে বলে জানান মন্দির কমিটির দপ্তর সম্পাদক ও ধামরাই উপজেলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সাংবাদিক রনজিত কুমার পাল (বাবু)। বিকেল ৪টায় মাধব মন্দির থেকে মাধব বিগ্রহসহ অন্যান্য বিগ্রহগুলি নিয়ে এসে সারাবছর যেখানে রথটি থাকে সেই রথ খোলায় রথের উপর মূর্তিগুলি স্থাপন করা হবে। এর পর বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে রথের শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রথখোলায় অস্থায়ী স্থাপিত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে। এই অনুষ্ঠানের আলোচানা সভা শেষে প্রধান অতিথি রথ উৎসবের পুরোহিত হাতে প্রতিকী রশি প্রদানের মাধ্যমে রথ টানার আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করবেন।

এই রথটি মূর্তি সমেত লাখো ভক্ত নর-নারী পাটের রশি ধরে কায়েত পাড়ার রথ খোলা থেকে প্রধান সড়ক দিয়ে টেনে পৌর এলাকার গোপন ঘরে নেয়া হবে। এখানেই রথটি প্রতিবছরের ন্যায় ৯ দিন অবস্থান করবে। মাধব ও অন্যান্য বিগ্রহগুলি রথ থেকে নামিয়ে নিয়ে ৯ দিন পূজারীদের দ্বারা পুজিত হবে কথিত মাধবের শ্বশুরালয় যাত্রাবাড়ি মন্দিরে। ৯ দিন পর আগামী ৯ই জুলাই অনুষ্ঠিত হবে উল্টো রথযাত্রা উৎসব। পূর্বের ন্যায় মাধব ও অন্যান্য দেব-দেবী বিগ্রহ রথে চড়িয়ে ১২ জুলাই বিকেল ৬ টায় টেনে আনবে পূর্বের স্থান ধামরাই পৌর এলাকার কায়েতপাড়াস্থ রথখোলায়। এখান থেকে মূর্তিগুলো চলে যাবে পুরোনো মাধবের নিজ আলয় মন্দিরে। রথ খোলায় রথটি সারা বছর রাখে বলে এই স্থানটির নামকরণ হয়েছে রথ খোলা ময়দান।

যশোমাধাব মন্দির পরিচালানা ও রথ কমিটির সাধারন সম্পাদক ও কুমুদিনি ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান ও দানবীর রনদা প্রসাদ সাহা (আর পি) সাহার পৌত্র রাজিব প্রসাদ সাহা বলেন, প্রতিবারের মত এবারও রথ উৎসব ও মেলার সার্বিক আয়োজন যথেষ্ঠ সুষ্টুভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। রথ উৎসব ও মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে পৌর এলাকা সহ ধামরাইয়ের একটি পৌরসভা ও ১৬ টি ইউনিয়নেই সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। উৎসব মূখর পরিবেশের রূপ লাভ করেছে। আগামী ১ জুলাই বিকেল ৪ টায় শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হবে মাসব্যাপী রথমেলা ও সনাতনধর্মী হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় রথ উৎসব। তিনি মেলা উৎসবে শান্তি শৃংখলা ও পরিবেশ সুন্দর রাখতে সবার সহযোগীতা কামনা করেছেন এবং রথ মেলা উৎসব উপভোগ করার জন্য আন্তরিকভাবে সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। রথ কমিটি কর্তৃক ২২২ সদস্য বিশিষ্ট স্বেচ্ছাসেবক দল গঠিত হয়েছে।