কুবির সনদপত্র উত্তোলনে ভোগান্তির অন্ত নেই
কুবি থেকে তোফাজ্জল হোসেন
রবিবার, ২৬ জুন ২০২২, দুপুর ২:৪৫
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগেও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দফতরে। স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে গতানুগতিক পদ্ধতিতে সনদ ও নম্বরপত্র উত্তোলন করতে গিয়ে নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অফিসিয়ালভাবে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর সনদপত্র কিংবা নম্বরপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে টাকা জমা দেয়ার তারতম্য অনুসারে জরুরি এবং সাধারণ দুইটি সময় দেয়া হয়। তাতে সনদ ও নম্বরপত্র উত্তোলনে আবেদন করার সাধারণ সময়ের ১৫ দিন এবং জরুরি হলে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রদান করা হয়। তাছাড়া বর্তমান অনলাইনের যুগে কাজের অগ্রগতি একধাপ এগিয়ে থাকা স্বাভাবিক হওয়ার সত্যেও বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রক্রিয়াটির অবস্থা বাস্তবতার ঠিক বিপরীত। এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, সনদপত্র পেতেই নামমাত্র ১৫ দিনের বিপরীতে ৩ কিংবা ৪ মাসের অধিক সময় ভোগান্তি পোহাতে হয়।
একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে পর্যাপ্ত সার্বিক সহযোগিতা পাচ্ছেন না তারা। পাশাপাশি সনদপত্র উত্তোলনের আবেদনের পর অযৌক্তিভাবে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। অ্যাকাডেমিক কাগজপত্র তুলতে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রার ভবন, আবাসিক হল ও ব্যাংকে বেশ কয়েকবার দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। কর্মচারীর স্বল্পতা, টেকনিক্যাল কিছু সীমাবদ্ধতার অজুহাতের অন্তরালে এড়িয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। আবার বিশেষ প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে কাগজপত্র উঠাতে গুনতে হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ। এই বিড়ম্বনার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন অনেকেই।
অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষাবর্ষের ভুক্তভোগী মো. মেহেদী হাসান বলেন, আমি সনদ ও নম্বরপত্রের জন্য আবেদন করে ৪ মাস পরে সনদপত্র হাতে পেয়েছি, কিন্তু মার্কসীট পাইনি। তখন নম্বরপত্র না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ আমাকে আরো ২ মাস অপেক্ষা করতে বলেন। প্রসাশনের নয়-ছয়ের ফলে আমরা বিভিন্ন দিক থেকে হতাশাগ্রস্ত হচ্ছি।
ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান জানান, আমাদের স্নাতক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর নম্বরপত্রের জন্য আবেদন করে রশিদ জমা দিয়েছিলাম জনতা ব্যাংকে। সেখান থেকে প্রাপ্তির রশিদ নিয়ে আবাসিক হলে দেখাতে হল। জমার রশিদ নিয়ে হলে আসলে প্রাধ্যক্ষ সই করেন। পরে কাগজপত্র জমা দিতে প্রশাসনিক ভবনে যেতে হয়। অনলাইনের যুগে এসেও আমাদের ঠিকই একাধিকবার আবাসিক হল থেকে ব্যাংকে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। যা নিয়মিত ভোগান্তি ছাড়া আর কিছুই না।
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নূরুল করিম চৌধুরী দেশের কণ্ঠকে বলেন, আমরা চাইলেই যথাযথ সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজগুলো দিতে পারছি না। কারণ ফলাফল প্রকাশের পরে ফলাফল সেকশন থেকে কয়েকটি ধাপে সার্টিফিকেট সেকশনে যায়। তারপর সার্টিফিকেটের কাজ সম্পন্ন হলে তা ট্রান্সকিট সেকশনে যায়। আর ফলাফলের এই সমস্ত কাজ করা হচ্ছে মাত্র ১ জন অপারেটর দিয়ে যা যথারীতি কষ্টসাধ্য। ভালোভাবে কাজ করার জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে নূন্যতম ৫/৬ জন অপারেটর প্রয়োজন হলেও তা আমাদের কাছে নেই। আমাদের শতভাগ আন্তরিকতা আছে, কিন্তু কাজ করার মতো পর্যাপ্ত জনবল নেই।
এ বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. এ. এফ. এম. আবদুল মঈন বলেন, ‘কোন শিক্ষার্থী যদি ভোগান্তির শিকার হয় এবং আমার নিকট লিখিত অভিযোগ করে তাহলে আমি অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এছাড়া আমি ভোগান্তির বিষযয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না।’
জনবল সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে। শুধু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দফতরেই নয়, অন্যান্য দফতরেও লোকবলের স্বল্পতা রয়েছে। আমরা চাইলেই জনবল নিয়োগ দিতে পারি না।