Walton
ads
D Diamond

মেঘনায় মাছ ধরে জীবন চলে সুক্কুরি বেগমের

ভোলা প্রতিনিধি

সোমবার, ১৩ জুন ২০২২, রাত ৯:০৮

Capture.JPG

ভোলা সদর উপজেলায় মেঘনার পাড়ে তুলাতুলি মাছঘাটের কাছে ৩০-৩২টি জেলে নৌকা ডাঙায় ভেড়ানো। সেখানে এক ডিঙির ওপর সংসার পেতেছেন জেলে সুক্কুরি বেগম। নৌকার ভেতরে তিনি রান্না করছিলেন। একটি বাটিতে কয়েক টুকরা আলু কাটা। পাশে ভাতের মাড় ঝরানো হচ্ছে।

জেলে পরিবার বলেই জানতে চাইলাম, কোন মাছ দিয়ে আলু রান্না করবেন? পান খাওয়া লালচে মুখে কিছুটা হেসে সুক্কুরি বলেন, ‘মাছের নাম মুহে আইন্নেন না, ডিম দিয়া রান্দুম’। সুক্কুরি জানালেন, নদীতে মাছ নেই বলেই জেলেরা আগেভাগে নৌকা নিরাপদে তুলে রেখেছেন। দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা মৌসুম (মার্চ-এপ্রিল) শেষ হওয়ার পর থেকে নদীতে এমন মাছের আকাল পড়েছে।

নদীতে মাছ ধরেই সুক্কুরির জীবন চলে। আর রান্নাবান্না থেকে ঘুম-সবই চলে নৌকায়। সুক্কুরি বেগম জানালেন, ভোরবেলা ১০ বছরের একমাত্র ছেলে জাকির হোসেনকে নিয়ে বের হয়েছিলেন মেঘনা নদীতে। সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ‘খেও’ (জাল ফেলা) দিয়ে বসে ছিলেন। একে একে পাঁচবার খেও দিয়ে যা মাছ পেয়েছেন, তা বিক্রি করে মোট ১১০ টাকা পেয়েছেন সুক্কুরি। ওই টাকা দিয়ে এক কেজি চাল, এক পোয়া আলু, এক হালি ডিম আর ২০ টাকার পান-সুপারি কিনেছেন। তবে ১১০ টাকায় সব হয়নি। আগের জমানো টাকা থেকেও কিছু খরচ করতে হয়েছে।

সুক্কুরির সঙ্গে আলাপের ফাঁকে আকাশে মেঘ গুড়গুড় করতে শোনা গেল। সুক্কুরির ডিঙিতে কোনো ছাউনিও নেই। বৃষ্টি এলে তখন সমস্যায় পড়তে হয়। সুক্কুরি জানালেন, বৃষ্টি এলে তখন পলিথিন মুড়িয়ে থেকে সময়টা পার করবেন।

সুক্কুরি বেগমের স্বামী আবদুল আলী মাঝি ছিলেন। তিন বছর আগে তিনি মারা গেছেন। এখন সুক্কুরি তাঁর ছেলেকে নিয়েই থাকেন। তবে আক্ষেপ নিয়ে বললেন, মৎস্য আড়তদার ছাড়া ডাঙার কেউ তাঁদের পছন্দ করেন না। তাঁদের কাছে জেলে কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেও জেলে হিসেবে তাঁরা কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। মৎস্য আড়তদারদের মধ্য থেকে কেউ জনপ্রতিনিধি হলে তখন তাঁরা ব্যক্তিগত খাতিরে ভিজিএফের চাল পান। তবে সেটির পরিমাণও কম।

ওই ডাঙার অন্য নৌকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ভোলা ও এর আশপাশের নদীতে প্রায় দেড় হাজার নৌকাবাসী জেলে পরিবার আছে। এসব নৌকার জেলেরা সরকারি সব ধরনের আইন মেনে মাছ ধরেন। আবার নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরা থেকে বিরতও থাকেন। কিন্তু সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে তাঁরা সব সময়ই বঞ্চিত। তাই তাঁদের জন্য আলাদা সরকারি বরাদ্দ প্রয়োজন বলে দাবি জানালেন তাঁরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন বলেন, নদীতে বাস করা নৌকাবাসী জেলেদের অনেকের কাছেই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। আবার অনেকের জেলে কার্ডও হয়নি। এ ছাড়া তাঁরা নদীতে স্থায়ীও নন। এ জন্য তাঁরা অনেক সময় সরকারি বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত। তবে চলতি বছর এ বিষয়ে ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

নদীতে মাছ কম থাকার বিষয়ে জামাল হোসেন বলেন, এখন নদীতে মাছ কম। আশা করা যায়, জুলাই-আগস্ট থেকে মাছ বাড়বে। আর নিষেধাজ্ঞার সময় বেকার জেলেদের চাল দেওয়া হয়েছে। নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে পারলে সব জেলেই এই সুবিধা পাবেন।