Walton
ads
D Diamond

শিশু আইন মেনে বাবুলের দুই সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক

বুধবার, ৮ জুন ২০২২, দুপুর ১:৫০

a5df4a49c4537a2c34b0561bd1d9f5f7e38dd25b3184b1c4.jpg

সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তাদের দুই সন্তানের জবানবন্দি নিতে পিবিআই কর্মকর্তাদের চট্টগ্রাম থেকে মাগুরায় যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মাগুরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে শিশুদের জবানবন্দি গ্রহণ করতে পিবিআইর তদন্ত কর্মকর্তাকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বুধবার (৮ জুন) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি সাহেদ নুরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতার জন্য মামলার জট হয়। সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের দুই সন্তানকে শিশু আইন মেনে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদনের আদেশের পূর্বে একথা বলেন আদালত।

আদালত জানান, যদিও তারা শিশু; কিন্তু তাদের সাক্ষ্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এ মামলার ক্ষেত্রে। শিশু আইনের এজাহার অনুসরণ করে মাগুরা জেলার সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে শিশুদ্বয়ের বিবৃতি রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। জিজ্ঞাসাবাদের তারিখে শিশুদ্বয়ের দাদা তাদেরকে সমাজসেবা কার্যালয়ে আনতে বাধ্য থাকবে। এক্ষেত্রে কোনো গড়িমসি বা টালবাহানা করা যাবে না। জিজ্ঞাসাবাদের আগে তাদেরকে বেশকিছু সময়ের জন্য আলাদাভাবে সমাজসেবা কর্মকর্তার নিকট রাখতে বাধ্য থাকবে।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় শুধু দাদা সামনে থাকবেন। চাচা বা অন্য কোনো ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। তবে সে সময় একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। কোনোক্রমেই শিশুদ্বয়ের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা এবং তাদের ওপর মানসিক চাপ যেন না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তদন্ত কর্মকর্তাকে আগামী ২৬ জুলাই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বুধবার (৮ জুন) আদালতে বাবুল আক্তারের দুই শিশুকে আইন মেনে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

এর আগে গত মার্চের ৩০ তারিখে বাবুলের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতে এ আবেদন জানান। যার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার এ আদেশ দেয়া হলো।

এর আগে গত ১৬ মার্চ শিশু আইন মেনে সতর্কতার সঙ্গে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত। আদালতের এ আদেশের পরে পিবিআই শিশু দুটিকে তাদের অফিসে হাজির করতে নোটিশ দেয়, যা তারা শিশু আইন অনুযায়ী করতে পারে না। এ কারণে শিশু আইন অনুসারে যাতে শিশু দুটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তার নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ মার্চ হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করা হয়।

এ বছরের ১৪ মার্চ মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চান হাইকোর্ট। বাবুল আক্তারের জামিন আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ রুল দেয়।

এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি (শুক্রবার) এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বাবুল আক্তারের দুই ছেলেমেয়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য সম্প্রতি আদালতে একটি আবেদন করা হয়। আবেদনের ওপর রোববার (১৬ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-৭ এ শুনানিও হয়। আর গত ১৬ মার্চ শিশু আইন মেনে সতর্কতার সঙ্গে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্দেশ দেন আদালত।

উল্লেখ্য, মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। ওই মামলায় গত বছরের ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের একটি আদালত তাকেই গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। সে সময় বাবুল আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেছিলেন, একই ঘটনায় মিতুর বাবার দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন বাবুল। এ ঘটনায় দুই মামলা আদালতে চলতে পারে না। আমরা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে যাব।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তার যে মামলাটি দায়ের করেছিলেন, সেটির তদন্ত শেষ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পিবিআই। কিন্তু আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন না নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। মিতুর বাবার করা মামলাটিও তদন্ত করছে পিবিআই। স্ত্রী খুন হওয়ার আগে চট্টগ্রাম নগরীর জিএইসি এলাকায় ছেলে আক্তার মাহমুদ মাহির ও মেয়ে তাবাসসুমকে নিয়ে থাকতেন বাবুল দম্পতি। ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলে আক্তার মাহমুদ মাহিরকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তিনি। এ মামলাতেই এখন তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।