Walton
ads
D Diamond

বঙ্গবন্ধুর চিঠি পাওয়া আব্দুর রবের নাম নেই বুদ্ধিজীবী তালিকায়

তালা থেকে ফিরে আলাউদ্দীন রাজা

বুধবার, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, বিকাল ৫:৫৬

সাতক্ষীরার তালার ডাঃ আব্দুর রব.jpeg

স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকায় ঠাঁই মেলেনি পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে হত্যা করে কপোতাক্ষ নদে ভাসিয়ে দেওয়া জাতীয় পতাকা উত্তোলন কারী সাতক্ষীরার তালার ডাঃ আব্দুর রবের নাম। তিনি তালা সদর ইউনিয়নের মাঝিয়াড়া গ্রামের সৈয়দ হাফেজ হযরত উল্লাহর পুত্র। ১৯৭১ সালে ৩ আগষ্ট ডাঃ সৈয়দ আব্দুর রব তালা সদরের তিন রাস্তার মোড়ে তার নিজ চিকিৎসালয়ে তৎকালীন জয় বাংলার পতাকা উত্তোলন করেছিল। সেই অপরাধে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর দোসর রাজাকারবাহিনী ও পাকিস্তানি সেনারা তাকে খুলনার কপিলমুনি ক্যাম্পে ধরে নিয়ে বর্বর অত্যাচার চালিয়ে হত্যা করে লাশ কপোতাক্ষ নদে ভাসিয়ে দিয়েছিল। শহীদ বুদ্ধিজীবী সংজ্ঞায় একজন চিকিৎসা হিসাবেই তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গেজেটে অন্তর্ভূক্ত জরুরী। সংবাদকর্মীদের সাথে সাক্ষাৎকালে এমনটাই দাবি করেছেন ডাঃ সৈয়দ আব্দুর রবের পুত্র সৈয়দ আব্দুল্লাহেল কাফী মঞ্জু। তিনি এ সময় শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের তালিকায় নাম লেখাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালের ৬ এপ্রিল শহীদ ডা. সৈয়দ আব্দুর রবের স্ত্রী মনোয়ারা খাতুনকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিঠি দিয়ে সমবেদনা জানিয়ে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন,‘‘আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনার সুযোগ্য স্বামী আত্মোৎসর্গ করেছেন। আপনাকে আমি গভীর দুঃখের সাথে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক সমবেদনা। আপনার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতিও রইল আমার প্রাণঢালা সহানুভূতি। এমন নিঃস্বার্থ মহান দেশ প্রেমিকের স্ত্রী হওয়ার গৌরব লাভ করে সত্যি আপনি ধন্য হয়েছেন। ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল’ থেকে আপনার পরিবারের সাহায্যার্থে আপনার সংশ্লিষ্ট মহকুমা প্রশাসকের নিকট এক হাজার টাকার চেক প্রেরিত হলো। চেক নম্বর- ০১৩৬৯৮। শহীদ ডা. সৈয়দ আব্দুর রব ব্যক্তিগত জীবনে দুই বিয়ে করেছিলেন। তার দুই স্ত্রীর ঘরে ৪ ছেলে ও ৬ মেয়ে রয়েছেন। তাদের মধ্যে তার বড় ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহেল বাকী (খসরু) ইতোমধ্যে মারা গেছেন। বাবার রেখে যাওয়া ‘মনোয়ারা ফার্মেসী’ ঘিরেই ছিল তার কর্মব্যস্ততা। তার ছোট (দ্বিতীয়) ভাই সৈয়দ আব্দুল্লাহেল কাফি মনজুও বাবার মতোই হোমিও চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত। স্থানীয়ভাবে যাকে মনজু ডাক্তার নামেই সবাই চেনেন।

এ ব্যাপারে সৈয়দ আব্দুল্লাহেল কাফি মনজু বলেন, ‘২০১২ সালে মারা গেছেন আমার মা মনোয়ারা খাতুন। তার নামেই তালা বাজারে মনোয়ারা ফার্মেসী ছিল। ওই ফার্মেসীতেই বাবা জয় বাংলার পতাকা উড়িয়েছিলেন। সেটি সম্ভবত জুলাইয়ের প্রথম দিকে হবে। এ ঘটনায় স্থানীয় রাজাকাররা খবর দিলে পাকিস্তানী আর্মিরা এসে সেই পতাকা খুলে নিয়ে যায়। তখন আমার বাবা দোকানে ছিলেন না। এরপর ১ আগস্ট স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় দোকান থেকে (মনোয়ারা ফার্মেসী) আমার বাবাকে ধরে নিয়ে যায় কপিলমুনি রাজাকার ক্যাম্পে। সেখানে তাকে দুইদিন অমানুষিক টর্চার চালিয়ে ৩ আগস্ট রাতে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর নাকি তার লাশ পার্শ্ববর্তী কপোতাক্ষ নদীর পাড়ে ফেলে দেয়া হয়। কিন্তু ভয়ে কেউ তার লাশটি আনতে যায়নি। পরে স্থানীয়রা সেই লাশ কপোতাক্ষ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।’

মনজু আরো বলেন, ‘বাবা ছিলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধু নিজেই আমার মাকে সমবেদনা জানিয়ে একটি চিঠি লিখেছিলেন। আমার মা-ও হয়তো বিষয়টি ভুলে গিয়েছিলেন। স্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বছর তিনেক আগে আমাদের বিষয়টি বলেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আমার মাকে লেখা বঙ্গবন্ধুর সেই চিঠিটি খুঁজে পায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাতা প্রদানসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। আমার বাবাও তো মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু নিজেই আমার মাকে শ^ান্তনা ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। আমরা কেন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবো? বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা এখন ক্ষমতায়। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিনি অনেক কিছু করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবার হিসেবে তার কাছে আমরা সুযোগ-সুবিধা আশা করি।’ তবে আশার কথা হলো মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কার্যক্রমে আবেদন করেছেন তিনি।

তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদ্য বিদায়ী কমান্ডার মোঃ মফিজ উদ্দীন বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে উনার সরাসরি ভূমিকা কতটুকু ছিল সেটি আমার জানা নেই। তবে রাজাকাররা উনাকে হত্যা করেছেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের শহীদ’ হিসেবে তার পরিবারকে প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়েছে।” তবে সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বইয়ের যে তালিকা আছে সেই তালিকায় ডাক্তার সৈয়দ আব্দুর আব্দুর রবের নাম রয়েছে বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের। পরিবার থেকে মুক্তিযোদ্ধারা মন্ত্রণালয়ের আবেদন করলে সেটি আমাদের কাছে আসলে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন পাঠানো হবে। যদি সকল তথ্য সঠিক থাকে তাহলে তাকে গেজেটের আওতাধীন করার সুপারিশ করা হবে।